নিজস্ব প্রতিবেদক: কাঁচাপাট রপ্তানি বন্ধসহ প্রতি মেট্রিকটন কাঁচাপাট রফতানিতে ২৫০ মার্কিন ডলার রফতানি শুল্ক আরোপের দাবি জানিয়েনে ব্যাবসায়ীরা। গতকাল বুধবার রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত হোটেল লেকশোরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘এখন আমাদের কাঁচাপাটের সর্বোচ্চ মূল্য ২৭৫০ টাকার মতো। আমাদের মিলমালিকরা এখন কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। যখন আমরা জুট মিলসের মিটিং করছিলাম, তখন এটার মূল্য সর্বোচ্চ ছিল ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকা। কেবল এক সপ্তাহের ভেতর প্রতিমণ পাটের দাম আড়াইশ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা বেড়ে গেছে। ভরা মৌসুমে কাঁচাপাটের মূল্য ২৭৫০ টাকা হতে পারে, এটা কারও অভিজ্ঞতায় নেই। এতে উৎপাদন শেষে যা মূল্য দাঁড়াবে তাতে বায়াররা কিনতে চাইবে না।’ সংগঠন দুটি ধারণা করছে, চলতি বছর অভ্যন্তরীণ চাহিদার তুলনায় দেশে প্রায় ১০ লাখ বেল কম কাঁচাপাট উৎপাদন হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. জাহিদ মিয়া বলেন, ‘বর্তমান পাট মৌসুমে কাঁচাপাটের ফলন খরা ও অতিবন্যার কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাটের এই ভরা মৌসুমে এরই মধ্যে পাটের বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়া শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে সাধারণত কাঁচাপাট প্রায় ৭৫ লাখ বেল উৎপাদন হয়ে থাকে। ধারণা করা যাচ্ছে, এ বছর তা হবে প্রায় ৫৫ লাখ বেল। পাটশিল্পের জন্য কাঁচাপাটের প্রয়োজন হবে প্রায় ৬০ লাখ বেল এবং গৃহস্থালি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন প্রায় পাঁচ লাখ বেল। মোট কাঁচাপাটের প্রয়োজন প্রায় ৬৫ লাখ বেল। তার মানে ১০ লাখ বেল পাট কম রয়েছে। প্রতিবছর কাঁচাপাট রফতানি হয় আট থেকে ১০ লাখ বেল, এখন এই পরিমাণ কাঁচাপাট রফতানি হলে আমরা ব্যাপক ঘাটতির মুখে পড়ব। আগে আমাদের নিজেদের চাহিদা পূরণ হোক, তারপর রফতানি।’
মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী আরও বলেন, ‘পাটপণ্যের মূল্য নির্ধারণ হয় কাঁচাপাট কেনার মূল্যের ভিত্তিতে। পাটপণ্য তৈরিতে প্রায় ৭৫ শতাংশ কাঁচাপাট কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়। এর মূল্য অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেলে পণ্যের উৎপাদনব্যয় বৃদ্ধি পাবে। কাঁচাপাট সরবরাহ ঘাটতির কারণে পাটকল বন্ধ হয়ে গেলে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রেতারা পাটপণ্য ব্যবহার থেকে সরে দাঁড়াবে, তা হবে দেশের পাটশিল্পের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক।’
পাটশিল্প রক্ষার্থে কাঁচাপাটের বাজারদর এবং সরবরাহ সহনীয় পর্যায়ে রাখা প্রয়োজন। কাঁচাপাটের অভাবে পাটকল বন্ধ হয়ে গেলে এই শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীরা চাকরি হারাবেন এবং দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে দেশের তফসিলি ব্যাংক, অর্থলগ্নী ও বীমা প্রতিষ্ঠান মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বলেও দাবি করেন জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান।